দুটো সত্যিকারের ব্যবসার স্টোরী দিয়ে শুরু করি, একটি হচ্ছে Pieter Levels(Levelsio) এর RemoteOk, আরেকটি হলো Sahil Lavingia এর Gumroad.
Pieter ছোট ছোট স্টার্টআপের জন্য বেশ জনপ্রিয়, তার অনেকগুলো স্টার্টআপ রয়েছে, তার মধ্যে RemoteOK একটি। এটি একটি জব মার্কেটপ্লেস, যেটি ২০২৪ এর হিসেব অনুযায়ী $3.4 Million রেভিনিউ জেনারেড করেছে। এটা মজার বিষয় না, মজার বিষয় হচ্ছে পুরো এই বিজনেসটা একটা সিঙ্গেল ল্যাপটপ দিয়ে পরিচালীত হয় এবং এই প্রোজেক্টি একটি সিঙ্গেল PHP ফাইলে(index.php) ডেভলপ করা এবং যেটার প্রোডাকশন ডাটাবেস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে SQLite. কি অবাক হচ্ছেন?

আচ্ছা, আরেকটু অবাক করি, Sahil ২০১১ সালে ডিজিটাল প্রোডাক্ট সেল করার জন্য একটি প্লাটফর্ম লঞ্চ করেন Gumroad নামে। যার খুবই মিনিমালিস্টিক ডিজাইন এবং সহজ ইউজার ইন্টারফেস। Sahil এর ভাষ্যমতে তার কোনো ফিজিক্যাল টিম নাই, এবং তার টেক টিমের সাইজ হচ্ছে ৭-৯ জন। সাহিল এই ৯ জন টেক টিম নিয়ে ২০২৪ সালে $23.8 million রেভিনিউ জেনারেট করেন।
তাহলে প্রশ্ন হলে বিজনেসে সুপার পাওয়ার টেক কতোটা জরুরী? এই বিষয়টা বুঝতে হলে বুঝতে হবে Tech Business এবং Tech-enabled Business এর ভিতর পার্থক্য।
Tech Business vs. Tech-enabled Business
এখানে এই দুই ধরনের বিজনেসের সাথেই টেক জড়িত, কিন্তু দুজনের টেকের প্রয়োগ একই রকমের নয়।
Tech Business
টেকনোলজি-নির্ভর বিজনেস বলতে আমরা বুঝি যেখানে টেকনোলজিই মূল প্রোডাক্ট। যেমন Google, Apple, Uber, Netflix। এই ধরনের বিজনেসে টেক সমস্যা মানেই অনেক সময় বিজনেস বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা।
Tech-enabled Business
অন্যদিকে, Tech-enabled Business হলো সেইসব ট্র্যাডিশনাল বিজনেস যেগুলো টেকনোলজিকে ব্যবহার করে নিজের কাজকে আরও সহজ, দ্রুত এবং স্কেলযোগ্য করে তোলে। যেমন Supper Shop, Delivery system.
একটি উদাহরন দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি
ধরুন আপনি ৮০’র দশকে গ্রামের হাটে মেয়েদের চুড়ি-ফিতা বিক্রি করতেন। হাট বসতো সপ্তাহে দুই দিন। যার যার কেনা দরকার সে হাটের দিনে আপনার কাছে এসে চুড়ি-ফিতা কিনে নিয়ে যায়। এখানে সমস্যা হচ্ছে ঐ দুই দিন ছাড়া আপনার কাছ থেকে প্রোডাক্ট কেনা যায় না।
তাই, এবার আপনি ভাবলেন বাড়ি বাড়ি ফেরী করে প্রোডাক্ট বিক্রি করবেন। যেই ভাবা সেই কাজ, আপনি কাস্টমার বাড়ানোর জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রোডাক্ট বিক্রি শুরু করলেন। এতে করে বেশি মানুষের কাছে রিচ করা যাচ্ছে এবং একটা পার্সোনালাইজড সম্পর্ক তৈরী হচ্ছে।
এখানে আরেকটি ঝামেলা, কাস্টমার যা চায় সেটা হয়তো আপনার কাছে নেই, সেক্ষেত্রে প্রথমবারে কাস্টমারের কাছ থেকে তার চাহিদা জেনে পরেরবার সেটা নিয়ে আসতে হয়। যদি কাস্টমারের চাহিদা আগে থেকেই জানা থাকতো তাহলে প্রথমবারেই তার কাঙ্খিত প্রোডাক্টটি পেয়ে যেত।
এইদিকে সময়ের পরিক্রমায় এরপর মানুষের হাতে ফোন চলে আসলো, তাই আপনি ভাবলেন আপনি আপনার কাস্টমারদের আপনার ফোন নম্বর শেয়ার করবেন যাতে তারা তাদের চাহিদা ফোন কলের মাধ্যমে জানাতে পারে এবং আপনি সেই প্রোডাক্টগুলো তাদের বাসায় পৌছে দিতে পারবেন। শুরু করলেন ফোন নম্বর শেয়ার করে কাস্টমারের কাছ থেকে ফোনেই অর্ডার নেয়া।
এভাবে অনেকদিন চলে গেলো, পৃথিবীতে এরই মধ্যে চলে এসেছে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম। মোবাইল নম্বর দিয়ে প্রোডাক্ট সেলের একটা সমস্যা হচ্ছে এটা খুব বেশি স্কেল করা সম্ভব হচ্ছে না, আর অনেক বেশি মানুষের কাছে এর মাধ্যমে রিচ করা সম্ভব না, আর তাই আপনি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম প্লাটফর্ম গুলো ব্যবহার করে একটা কাস্টমারবেজ তৈরী করলেন এবং সেখানেই আপনার প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন দেয়া, অর্ডার নেয়া এবং কাস্টমার সাপোর্ট দেয়া শুরু করলেন। এখানে মেসেজিং এর মাধ্যমে অর্ডার রিসিভ করে স্প্রেডশিটের মাধ্যমে অর্ডারের ডাটা, কাস্টমারের ডাটা, ডেলিভারীসহ সবকিছু ট্রাক রাখা শুরু করলেন। সমস্যা হচ্ছে যেহেতু এগুলো ডিরেক্ট কোনো প্রোডাক্ট সেলিং প্লাটফর্ম না তাই এখানে কাস্টমার ম্যানেজ করা, কাস্টমারকে রিটার্গেটিং করা, পেমেন্ট হ্যান্ডল ও আফটার সেলস সার্ভিস দেয়া অনেকটা কস্টকর।
আপনি চটজলদি বানিয়ে ফেললেন ইকমার্স ওয়েবসাইট এবং সেখানেই আপনার সেই ট্র্যাডিশনাল চুড়ি ফিতার বিজনেস করা শুরু করলেন। কারন এতো দিনে মানুষ ওয়েবসাইট ব্য়বহার করতে অভ্য়স্থ হয়ে গেছে। এখানে অর্ডার থেকে ডেলিভারী পুরো বিষয়টাকে অটোমেট করা গেলো এবং কাস্টমার ম্যানেজ করাও সহজ হলো।
কিন্তু আপনার বিজনেসে প্রতিদিনই নতুন নতুন অফার ও ক্যাম্পেইন থাকে, যেগুলো কাস্টমাররা তাৎক্ষনিক জানতে পারলে আপনার বিক্রী আরও বেড়ে যেতো। এদিকে পৃথিবী স্মার্টফোন আর ওয়াইফাই এর জগতে হাবুডুবু খাচ্ছে, সবার হাতে হাতে মোবাইল ও ইন্টারনেট। আপনিও এই সুযোগটি হাত ছাড়া করতে চাইলেন না, তারপর তৈরী করলেন একটি মোবাইল অ্যাপ। দিনে রাতে পুশ নোটিফিকেশন দিয়ে মানুষকে আপনার নতুন অফার জানালেন, আপনার প্রোমোশনাল কন্টেন্ট কাস্টমাররা সহজেই পেয়ে যাচ্ছে। কাস্টমার এখন আগের থেকে অনেক বেশি ডিসকাউন্ট পাচ্ছে, নতুন কোনো আইটেম আসলে সেটা তাৎক্ষনিক জেনে যাচ্ছে, ফলে এটি ব্যবসাকে তরান্বিত করছে।
উপরের এই লম্বা আলোচনায় আমরা কি বুঝলাম? আপনার কোর বিজনেস হচ্ছে মেয়েদের চুড়ি-ফিতা বিক্রী করা। আপনি আপনার বিজনেস এক্সেলারেট করতে একেক সময় যুগের চাহিদা অনুযায়ী একেকটা টুলকে বেছে নিয়েছেন। অর্থাৎ আপনি আপনার এক্সিসটিং বিজনেসের এক্সপেরিয়েন্স বাড়াতে কিংবা ইফিসিয়েন্সি ইম্প্রুভ করতে টেককে টুল হিসেব ব্যবহার করছেন, এখানে টেক কিন্তু আপনার মেইনস্ট্রিম বা কোর প্রোডাক্ট নয়। টেক এখানে জাস্ট আপনার কোর প্রোডাক্ট ইভেক্টিভলি সেল করার একটা টুল মাত্র।
কোনো রিয়েল বিজনেস পার্সনের যদি ইকমার্স প্লাটফর্ম ধ্বংসও হয়ে যায় তাও তার দক্ষতা দিয়ে বিজনেস অনেকদিন টিকিয়ে রাখতে পারার কথা। ইকমার্স সাইটে যদি শুধু অর্ডার প্লেস করার অপশনও থাকে তাও বিজনেস ধ্বসে যাবার কথা না। সে অর্ডার প্লেসের পরে বাকি কাজ ম্যানুয়ালি হ্যান্ডল করবে। হ্যা সেটা কঠিন হবে তবে অপারেশন ঠিকই রানিং রাখতে পারবে। আর এরই মধ্যে সে তার সিস্টেম ঠিক করে ফেলবে। যদি কোনো টেক-এনাবলড বিজনেস টেকের উপরে পুরোটাই নির্ভরশীল হয়ে যায় তাহলে সেই বিজনেস মডেলেই ঝামেলা আছে বোঝা যায়।
আপনি জানলে হয়তো অবাক হবেন যে বাংলাদেশের জনপ্রিয় Ride Sharing প্লাটফর্ম Pathao কিন্তু শুরুতে তাদের রাইড শেয়ারের কার্যক্রম WhatsApp গ্রুপের মাধ্য়মে পরিচালনা করতো। এবং এগুলো Google Sheet এর মাধ্যমে ম্যানেজ করতো। আর সেখান থেকেই পাঠাও আজকে এই জায়গায়।
এখনও এমন অনেক বিজনেস আছে যারা কোটি টাকা প্রফিট করছে কোনো ধরনের টেক সহায়তা না নিয়েই(হ্যা তারা টেক হিসেবে ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে অবশ্য), আর সেখানে আমাদের দেশের স্টার্টআপগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে শুধু টেকের কারনে, ভাবা যায়?
যাইহোক, আপনি বিষয়টাকে কিভাবে মূল্যায়ন করছেন সেটা কিন্তু কমেন্টে জানাতে পারেন।